সোমবার ১২ মে ২০২৫ ২০:০৫:০৯ পিএম
শিরোনাম যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলেন হাসিনাপুত্র জয়, নিয়েছেন শপথ       রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত থাকবে : প্রধান উপদেষ্টা       সাইবার নিরাপত্তায় নিয়ে কাজ করছে পটুয়াখালীর শাওন       পুলিশের হাতে আর মারণাস্ত্র থাকবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা       আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি        আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সব পার্টি মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে : প্রেসসচিব       রাজধানীতে হিটস্ট্রোক সেন্টার উদ্বোধন, মিলবে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা      
সংস্কার, বিচার নাকি নির্বাচন?
নিজস্ব প্রতিবেদক :
Published : Saturday, 19 April, 2025
সংস্কার, বিচার নাকি নির্বাচন?

সংস্কার, বিচার নাকি নির্বাচন?

বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনটি শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। এই তিনটি বিষয় যেন এখনকার জাতীয় সংলাপের মূল স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—কোনটি আগে? সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন? না কি বিচার ছাড়া সংস্কার অসম্পূর্ণ? নাকি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই সব সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব? এই বিতর্ক শুধু মতামতের পার্থক্য নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে কোন পথটি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর হবে, সেই পথনির্ধারণের প্রশ্নও বটে।

প্রথমে আসা যাক সংস্কারের প্রসঙ্গে-

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দলীয় দ্বন্দ্ব, প্রশাসনিক অকার্যকারিতা, দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব—সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। শুধু একটি নির্বাচন আয়োজন করলেই এই কাঠামোগত সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবেশে মানুষ আস্থা হারিয়েছে, সেখানে আগে প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার—যেমন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, আমলাতন্ত্রের নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া এবং গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করা। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন আয়োজন মানে পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া, যা আবারও একই ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে।

এরপর আসে বিচার। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে যেসব ঘটনা সামনে এসেছে, সেগুলোর নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক বিচার হওয়া জরুরি। বিচারহীনতা সংস্কার ও নির্বাচন উভয়েরই বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। জনগণের মধ্যে যে গভীর আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হলে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।

একটি অন্তর্র্বতী সরকার যদি নিরপেক্ষ ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে সেটি একটি নতুন সামাজিক চুক্তির ভিত্তি রচনা করবে, যেখানে সব পক্ষ ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ফিরে আসার সুযোগ পাবে।
অবশেষে, নির্বাচন। গণতন্ত্রের অপরিহার্য ভিত্তি। জনগণের অভিমত ও প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এই নির্বাচন কেমন হবে? নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে তা আবারও সংকটকে দীর্ঘায়িত করবে।

নির্বাচন যেন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও আস্থাপূর্ণ প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়, তার জন্য আগেই প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার ও বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা।
এই তিনটি বিষয়—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—আসলে একে অপরের পরিপূরক। কোনো একটিকে বাদ দিলে অন্য দুটি তাদের অর্থ হারায়। এদের মধ্যে কোনো একটি ‘অগ্রাধিকার’ হিসেবে নির্ধারণ না করে বরং ‘সমন্বয়’ করাই এখন সবচেয়ে জরুরি কৌশল।

বাংলাদেশ এখন যে সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, তাতে কেবল একটি ভালো নির্বাচন যথেষ্ট নয়, কেবল সংস্কারও অসম্পূর্ণ এবং বিচারের একপাক্ষিক প্রয়োগও গ্রহণযোগ্য নয়। একটি গ্রহণযোগ্য ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত রোডম্যাপ, যেখানে এই তিনটি স্তম্ভ—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—একসাথে কাজ করবে।

তাই প্রশ্ন শুধু ‘সংস্কার, বিচার না নির্বাচন’—এতে আটকে না থেকে উত্তর হতে হবে ‘সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন’। তিনটিরই সমান্তরাল অগ্রগতি নিশ্চিত করলেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি টেকসই গণতন্ত্রের পথে এগোতে পারবে।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সর্বশেষ সংবাদ
⇒সর্বশেষ সব খবর...
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১, ৪১০৬৪১১২, ৪১০৬৪১১৩, ৪১০৬৪১১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪,হটলাইন : +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০৩-৪
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected], [email protected], web : www.gonokantho.com