শিরোনাম |
বাড়ছে উত্তেজনা, প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও ছড়াতে পারে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
|
ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গাজায় এবং লেবাননে ইসরায়েলের চলমান যে যুদ্ধ চলছে, তার ক্ষতিকর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অনেক দূরে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। শনিবার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তৃতায় এই সতর্ক বার্তায় তিনি বলেন, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষতিকর প্রভাব শুধু পশ্চিম এশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এই বিষয়টি বিশ্বের জানা উচিত। অনিরাপত্তা ও অস্থিতিশীলতা অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি তার চেয়েও বেশি দূরে যেতে পারে এর ক্ষতিকর প্রভাব। মধ্যপ্রাচ্যে এরই মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। গাজার মতো লেবাননেও একইভাবে অব্যাহত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর জবাবে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। তাছাড়া ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যেও এরই মধ্যে কয়েক দফায় সরাসরি হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, মধ্যেপ্রাচ্যে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এরপর সেদিনই গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েল। তবে সম্প্রতি গাজা যুদ্ধ থেকে সামরিক শক্তিকে লেবাননের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। গত সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পুরোমাত্রার যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরায়েল। লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এক জেনারেল নিহত হওয়ার পর গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। ওই দিন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে দুই শতাধিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের সামরিক বাহিনী। এই হামলার জবাবে গত ২৬ অক্টোবরে ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, ২৬ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর চার সদস্য নিহত ও রাডার ব্যবস্থায় সীমিত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের গণমাধ্যমের খবরে ইসরায়েলি হামলায় একজন বেসামরিকের প্রাণহানির তথ্যও জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল পাল্টা হামলা না চালাতে ইরানকে সতর্ক করলেও তেহরান কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, গাজা এবং লেবাননে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ইরানের প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি বলেন, ‘যদি তারা (ইসরায়েলিরা)... যুদ্ধবিরতি মেনে নেয় এবং এই অঞ্চলের নিপীড়িত ও নিরপরাধ মানুষকে গণহত্যা বন্ধ করে, তাহলে সেটি আমাদের প্রতিক্রিয়ার মাত্রা ও ধরণে প্রভাব ফেলতে পারে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির একজন উপদেষ্টা ইসরায়েলকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলী লারিজানি বলেছেন, ইরানে সংঘাত টেনে নিয়ে আসাই ইসরায়েলের লক্ষ্য। এই ফাঁদ এড়াতে আমাদের অবশ্যই বুদ্ধিমানের সাথে কাজ করতে হবে এবং সহজাত প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস। এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের একটি সিস্টেম্যাটিক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি এবং এ ঘটনায় যথাযথ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের ৭ আগস্টের পর থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি হামলায় ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, তারা ৮ হাজার ১১৯ জন নিহতের তথ্য যাচাই করেছে। এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক কম হলেও উভয় পক্ষই বলেছে, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। |