শিরোনাম |
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক :
|
জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের করা ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠনে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ৩১ আগস্ট জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলাম। পরবর্তীতে সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্য আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ লিখিত আবেদন জানায়। ইতিমধ্যে পাঁচজন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেমন জনপ্রশাসন হওয়া উচিত- দীর্ঘদিন সিভিল প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতায় আমরা উপদেষ্টামণ্ডলীর সামনে লিখিতভাবে উপস্থাপন করি এবং সবাই আমাদের দাবিকে যৌক্তিক বলে মতামত প্রদান করেন। তারা বলেন, “বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ইতিপূর্বে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেগুলো তাদের দিয়েই করা হয়েছিল, যারা নিজেদের সুবিধার্থে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি করেছেন। অতীত অভিজ্ঞতা এবং অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে আমরা সবাইকে অবগত করেছিলাম যে এবারও তেমন কমিটি গঠন হতে পারে। বিষয়টি খেয়াল রেখে সব পেশার সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করি। সেই সঙ্গে সব পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের সংগঠন ‘আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-কে অন্তর্ভুক্ত করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি করতে সব উপদেষ্টাকে লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। সাক্ষাতে বিষয়টি উপস্থাপন করলে উপদেষ্টামণ্ডলী আমাদের আশ্বস্তও করেছিলেন। আমরাও আশা করেছিলাম, প্রকৃত জনসেবা ব্যবস্থাপনায় প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীর মতামতের ভিত্তিতে এবার একটি আধুনিক জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুযোগ হবে। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ যে আটজন সদস্যকে নিয়ে গঠন করছে, সেখানে ২৫টি ক্যাডারের কোনো সদস্য নেই। বরং কমিশন প্রধানসহ ছয়জন সদস্য একটি ক্যাডারের, যারা সিভিল প্রশাসনের বৈষম্য সৃষ্টিকারী। এ ছাড়া ইতিপূর্বেও বৈষম্য নিরসনে তাদের দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং তারা সেই সুযোগে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি করেছেন। তারা আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরে যারা জনপ্রশাসনে থেকে ভোটারবিহীন নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন, যারা এ দেশের জনসেবা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছেন নিজস্ব স্বার্থে, যারা প্রশাসন ব্যবস্থাকে চরম কেন্দ্রীভূত করে সব ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করেছেন, তাদেরকেই কমিশনের সদস্য করা হয়েছে; যেন এ দেশের উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য ব্যতীত আর কারো কোনো ভূমিকা নেই। এ কারণেই স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বস্তুত বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় পেশাদারির কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি, এখনো হচ্ছে না। একটি ক্যাডার যাদের প্রকৃত কাজ ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনা, কালের প্রবাহে চানক্যনীতি অবলম্বন করে, আজ তারা পুরো প্রশাসনব্যবস্থা গিলে ফেলেছেন। নিজেদের মূল দায়িত্ব ফেলে আজ তারা সব ক্যাডারের মধ্যে কর্তৃত্ববাদের নীতি গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার দুর্গতি সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি অবগত আছি। যদিও কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ নামে এ কমিশন গঠন করল। কিন্তু ‘আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ মনে করে, বৈষম্যপূর্ণ এ কমিশন কোনোভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে না, বরং বিদ্যমান সিভিল প্রশাসন আরো গণবিরোধী হবে। তাই, পরিষদ এ কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করছে এবং সব পেশাজীবীকে অন্তর্ভুক্তি করে পুনর্গঠন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। তারা বলেন, “এভাবে জনমুখী সেবা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জনপ্রশাসন শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানুষকে শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের বীজ। তাই আমরা আধুনিক বাংলাদেশের সেবা ব্যবস্থাপনা থেকে ‘জনপ্রশাসন’ শব্দটিই বাতিল করতে চাই। জনগণের টাকার বেতনভুক্ত ব্যক্তি কোনোভাবেই জনগণের প্রশাসক হতে পারেন না। তাই জনপ্রশাসন শব্দটি যথাযথ নয়। সময় এসেছে এসব চিন্তা করার এবং ভ্রান্তনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। কিন্তু এসব চিন্তা যেন করা না যায়, জনসেবার প্রকৃত রূপরেখা যেন প্রকাশ না পায়, সে জন্য একটা স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশে সব সময় ক্রীড়ানকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দেশের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ২৫টি ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করেন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা এ ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে শুধু একটি ক্যাডারের প্রতিনিধি দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়। তাই আমরা প্রস্তাব করছি-১. বিদ্যমান জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। ২. আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মাধ্যমে সব ক্যাডারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৩. সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে হবে। |