শিরোনাম |
‘ভারতীয় একটি গল্প পড়ে’ ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে প্রতারণার ছক কষেণ সোহাগ
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা:
|
হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে হত্যার হুমকিদাতা সোহাগ মিয়াকে(৩২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে সিলেট শহরের একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার।চুনারুঘাট থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি টিম যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মোবারকপুরের মন্তাজ মিয়ার ছেলে। বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে সোহাগ মিয়া জানিয়েছেন যে, তিনি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ২০১১ সালে কাজের জন্য বিদেশ যান এবং ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর দালালের মাধ্যমে পর্তুগাল পাঠাবেন বলে তার এলাকার ১২জনের কাছ থেকে ৮/১০ লাখ করে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে ভারতে পালিয়ে যান ‘ ‘পরে দেশে এসে টাকার অভাবে হ্যাকার হওয়ার চেষ্টা করেন সোহাগ। ইন্টারনেট হতে হ্যাকিংয়ের বিষয়ে ধারণা নিতে ডার্ক ওয়েবের সাথে পরিচয় হয় তার। এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ভারতীয় একটি গল্প পড়েন তিনি। যাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তার জীবনের হুমকি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি তার নজরে আসে। সেই এই গল্পের আলোকে এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে কৌশল খাটিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু এমপি ও তার পিএসের কোনো ফোন নম্বর না থাকায় ওয়েবসাইট থেকে চুনারুঘাট থানার ওসির নম্বর সংগ্রহ করে হত্যার হুমকির ম্যাসেজ পাঠান এবং এমপি ব্যারিস্টার সুমনের সাথে কথা বলিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। পরে ওসির মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমনের সাথে কথা বলেন এবং তাকে জানান ৪/৫জনের একটি দল তাকে হত্যা করার কিলিং মিশনে নেমেছে। তার প্রত্যাশা ছিল এমপি সুমন অথবা তার পিএস তার সাথে যোগাযোগ করে তথ্য নিতে আসবেন। তখন তিনি মোটা অংকের টাকা দাবী করবেন। পুলিশ সুপার বলেন, ‘কিন্তু এমপি সুমন বিষয়টি জানার পর ফেইসবুক লাইভে এসে প্রতিকার চান এবং জিডি করেন। এতে করে তার নির্বাচনী এলাকায় শুরু হয় আন্দোলন। পরে সোহাগ মিয়া ভয় পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যান। সেখানে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে বুঝতে পেরে সিলেটে চলে আসেন। পরে নবীগঞ্জের একটি মামলার সূত্র ধরে তার পাসপোর্ট পেয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করা হবে এবং আসামিকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য উদঘাটন করা হবে। নবীগঞ্জের একটি প্রতারণার মামলায় সোগাগ মিয়াকে বুধবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সে ওই মামলার পলাতক আসামি। মৌলভীবাজারেও তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা রয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, সোহাগ মিয়া একজন প্রতারক ও অনলাইন জুয়াড়ী। তার বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানা ও মৌলভীবাজারের রাজনগর থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে। তিনি দুটি বিবাহ করেছেন এবং তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রীদের সাথে তার পারিবারিক কলহ চলছে। তার মূল কাজ লোকদেরকে বিদেশে পাঠানোর নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এদিকে, এই হুমকিকে কেন্দ্র করে দুইদিন আগে ব্যারিস্টার সুমনের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগ করে জেলা পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আপাতত গানম্যান থাকবে। পরে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এমপির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য যারা কাজ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। |