বুধবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১২:৩৪ পিএম
শিরোনাম মারকুইস পাম্পস ও স্যানিটারি ওয়্যারের ডিলার মিট-২০২৪ অনুষ্ঠিত       মা-বাবাকে মারধর, ছেলে-নাতি গ্রেপ্তার       মিরসরাইয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের হুমকি হামলা        খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ       ড. ইউনূসকে ‘গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড’ বললেন শেখ হাসিনা       বিএনপি আমলে আ.লীগ, আর আ.লীগের সময়ে বিএনপি ‘ট্যাগের’ শিকার ইলিয়াস কাঞ্চন       জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন প্রধান উপদেষ্টা      
কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই
নিজস্ব প্রতিবেদক :
Published : Thursday, 9 May, 2024
কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই

নব্বই দশকের চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এ রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বাকি ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও আদনান সিদ্দিকী।

বাংলাদেশের রহস্যময় ব্যক্তিদের তালিকা করলে এর প্রথমদিকেই যাদের নাম থাকবে তাদের একজন এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই। যাকে নিয়ে আছে নানা গল্প, নানা রহস্য। আর এসব গল্পের বেশিরভাগই চলচ্চিত্র জগতের নারী ও হত্যা কেন্দ্রিক। এসব গল্পের কতটুকু সত্য আর কতটুকু মুখরোচক মিথ্যা সে নিয়েও আছে নানা মত।

নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি থাকার কারণে অনেকেই মনে করেন গডফাদার বলেই তাকে ভাই বলা হয়। সাধারনত মাফিয়া ডন বা গডফাদারদেরকে ভাই ডাকে তাদের অনুগতরা। কিন্তু আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নামে ‘ভাই’ শব্দটি মূলত তাদের বংশপদবী। তাঁদের পরিবারের সকলেরই নামের শেষে ভাই পদবী আছে। এমনকি নারীদের নামের সঙ্গেও ভাই দেখতে পাবেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ভাই। মায়ের নাম খাদিজা মোহাম্মদ ভাই।

১৯৪৭ এ ভারত ভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে আসে। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভুত। তারা ‘বাহাইয়ান’ সম্প্রদায়ের লোক। বাহাইয়ান’ কে সংক্ষেপে ‘বাহাই’ বলা হয়। উপমহাদেশের উচ্চারণে এই ‘বাহাই’ পরবর্তীতে ‘ভাই’ হয়ে যায়।

ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় আরমানিটোলায়। পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও শুরু করে ব্যবসা। দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার  অর্থ সম্পদ। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যাবসা। আবার মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তিনি সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য। কথিত আছে, ভারতের পলাতক ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

ব্যবসার পাশাপাশি ৯০ এর দশকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকে নাকি নায়িকাদের রূপের মোহে নাকি কালো টাকা সাদা করতে নাকি শুধুই ব্যবসায়িক মানসিকতায় অথবা মিডিয়ার মনযোগ কাড়তে প্রযোজনায় আসলেন- সেটা নিয়ে তর্ক করাই যায়। তবে এসেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেললেন। পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিকরা সমীহ করে চলতো তাকে। ৫০টির মত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।  দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্লামার আনতেও তার ভূমিকা ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ব্যাটারির ‘আলো আলো বেশি আলো’ বিজ্ঞাপনে মিতা নূরের ঝলমলে উপস্থিতি তখন বেশ নজর কেড়েছিল।

এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রেপ্তার হন। প্রচলিত আছে এক নারী নিয়ে দন্দ্বের কারনেই এরশাদ তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। এরশাদ এক নারীকে পছন্দ করেন, একই নারীর প্রতি আকাঙ্খা ছিল আজিজ এর। অবশ্য দ্রুতই প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সাথে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প ছড়াতে থাকে। একজন পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে কিন্তু সেটাকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করা হয়।  তবে তিনি ব্যাপক ভাবে আলোচনায় আসেন ১৯৯৭ সালে। সেসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে  হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটাকে আতœহত্যা বলেই প্রচার করা হয়। যদিও সালমান শাহ এর পরিবার ও তার ভক্তদের ধারণা এটা হত্যাকান্ড।  পারিপার্শিক আলামতেও এটাকে হত্যাকান্ড হিসেবেই মনে হয়। আবার আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর মত সালমানের স্ত্রী সামিরারও থাইল্যান্ড এ বসবাস সন্দেহকে বাড়িয়েই দেয়।

শোনা যায় সালমান শাহ নিহত হওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেয় আজিজ।  এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সকলের সামনে আজিজকে চড় মারে সালমান। এটাকে মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই। যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। সালমান হত্যাকান্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় আজিজকে। কিন্তু কোন প্রমাণ না পাওয়া পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়।

এর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় আরেক চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরী কে। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এই ব্যবসা নিজেদের কব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে ধারনা।

তবে বারবারই প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন আজিজ। এবং আজিজ মোহাম্মদ ভাই দাবী করার সুযোগ পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিডিয়াই তাকে ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে বারবার। ২০১২ সালে মাদক ব্যবসার অপরাধে আজিজের ভাতিজা, ইয়াবা সম্রাট বলে খ্যাত আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়েছে।

বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আনন্দ ফূর্তি করে সময় কাটাতে পছন্দ করা এই লোককে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পার্টিতে, ক্লাবে নারীদের সাথে ফূর্তিরত অবস্থায় দেখা যায়। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। পরিবারে আর আছে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে।

উইকিপিডিয়া বলছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তিনি হত্যা ও মাদক পাচারসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
⇒সর্বশেষ সব খবর...
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১, ৪১০৬৪১১২, ৪১০৬৪১১৩, ৪১০৬৪১১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪,হটলাইন : +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০৩-৪
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected], [email protected], web : www.gonokantho.com