শিরোনাম |
হাড় ও জোড়া লেগে যাওয়া রোগ “এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস”
নিজস্ব প্রতিবেদক :
|
এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস কী? এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (এএস) হলো এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনক আর্থ্রাইটিস যা প্রাথমিকভাবে মেরুদন্ড এবং স্যাক্রোইলিয়াক (SI) জয়েন্টগুলিকে প্রভাবিত করে। এটি মেরুদন্ড চলমান একীকরন প্রক্রিয়া যার ফলে মেরুদ- শক্ত হয়ে যায় এবং অচলতা দেখা দেয়। এটি মেরুদন্ডকে কুঁজো করে দেয়। পাঁজর আক্রান্ত হলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও অসুবিধা হতে পারে। কাদের এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস হতে পারে? যে কারো এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস হতে পারে, যদিও এটি মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বেশী হয়ে থাকে। এই রোগের উপসর্গ সাধারণত ১৭ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে দেখা যায়। এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস একটি জেনেটিক রোগ যা পারিবারিক ভাবে হতে পারে। লক্ষণ: ১. পিঠে ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া, যা সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বেশি হয় এবং চলাফেরার সাথে সাথে কমে আসে। ২. মেরুদ-ের গতিশীলতার প্রগতিশীল ক্ষতি, যার ফলে মেরুদন্ড শক্ত হয়ে যায়। ৩. স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টের ব্যথা, পিঠের নিচের অংশে এবং নিতম্বে ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যায়। ৫. এনথেসাইটিস, যা হাড়ের সাথে টেন্ডন বা লিগামেন্টের সংযুক্ত স্থানে প্রদাহ। ৬. ক্লান্তি এবং শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা হ্রাস। ৭. ইউভাইটিস বা চোখের মাঝখানের স্তরের প্রদাহ। ৮. সোরিয়াসিস কারণ: এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই, যদিও জেনেটিক কারণ জড়িত বলে মনে হয়। বিশেষ করে, যাদের HLA-B27 নামক জিন আছে তাদের এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। যাইহোক, শুধুমাত্র জিনসহ কিছু মানুষের এই রোগের বিকাশ ঘটে। রোগ নির্ণয়: ১. ইতিহাস ২. শারীরিক পরীক্ষা ইমেজিং স্ক্যান: ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যানগুলি সাধারণত এক্স-রের চেয়ে আগে মেরুদন্ড সমস্যা সনাক্ত করতে পারে। ৩. রক্ত পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষা HLA-B27 জিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করতে পারে। জটিলতা: ১. কশেরুকা জোড়া লেগে যাওয়া (এ্যাঙ্কাইলোসিস)। ২. কাইফোসিস (মেরুদ-ের সামনের বক্রতা)। ৩. অস্টিওপোরোসিস (হাড় ছিদ্র রোগ)। ৪. বেদনাদায়ক চোখের প্রদাহ (আইরাইটিস বা ইউভাইটিস) এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা (ফটোফোবিয়া)। ৫. হৃদরোগ, যার মধ্যে অ্যাওর্টাইটিস, অ্যারিথমিয়া এবং কার্ডিওমায়োপ্যাথি। ৬. বুকে ব্যথা যা শ্বাসকে প্রভাবিত করে। ৭. চোয়ালের প্রদাহ। ৮. কাউডা ইকুইনা সিন্ড্রোম করনীয়: চিকিৎসাঃ *ঔষুধঃ ১. নন স্টেরয়েডাল বিরোধী প্রদাহজনক ওষুধ (NSAIDs) ২. রোগ পরিবর্তনকারী অ্যান্টি-রিউম্যাটিক ড্রাগস (DMRD) ৩. স্টেরয়েডাল থেরাপি। *সার্জারিঃ এ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত অল্প সংখ্যক লোকের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারিতে একটি কৃত্রিম জয়েন্ট ইমপ্লান্ট করা হয়। কাইফোপ্লাস্টি করে বাঁকা মেরুদ- সংশোধন করা হয়। *ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসাঃ ১. স্ট্রেচিং ব্যায়াম: মৃদু প্রসারিত ব্যায়াম মেরুদন্ডের গতিশীলতা বজায় রাখতে এবং শক্ত হওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। ২. শক্তিশালীকরণ (Strenthening) ব্যায়াম: মেরুদ-কে সমর্থনকারী পেশীগুলির জন্য লক্ষ্যযুক্ত শক্তিশালীকরণ (Strenthening) ব্যায়াম দেহ ভঙ্গি উন্নত করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ৩. অ্যারোবিক ব্যায়াম: সাইক্লিং, সাঁতারের মতো হালকা অ্যারোবিকস ব্যায়াম হার্টের ফিটনেস এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে বেশ কার্যকর। ৪. দেহভঙ্গির উন্নতি: সঠিক দেহভঙ্গি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং মেরুদ-ের জোড়া লেগে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীকে সঠিক দেহভঙ্গি এবং শরীরের মেকানিক্স শেখাতে পারেন। ৫. চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে শ্বাসের ব্যায়াম। ৬. জয়েন্টগুলির গতিশীলতা বাড়াতে টেপিং, ব্রেসিং এবং সহায়ক ডিভাইস ব্যবহার। ৭. ইলেকট্রোথেরাপি ৮. মেনুয়ালথেরাপি ডা. মোহাম্মদ সফিউল্যাহ প্রধান ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহেবিলিটেশন স্পেশালিস্ট সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএরইচএস) ও কনসালটেন্ট, ডিপিআরসি ১২/১ রিং, শ্যামলী, ঢাকা |